বিশ্বনাথে শেষ দিনে মাঠে নামলেন মুহিবুর রহমান

প্রকাশিত: ১২:০০ অপরাহ্ণ, |                          

রাজনীতির মাঠে তিনি কখনো আলোচিত, কখনো প্রশংসিত। ঘর পাল্টানোর খেলায়ও তিনি সেরা। শেষ সময়ে এসে রাজনীতির মাঠে একেবারেই নীরব। তবে- ভোট এলে সরব হয়ে ওঠেন বিশ্বনাথের মুহিবুর রহমান। বিশ্বনাথ উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন দুইবার। জাতীয় সংসদ নির্বাচনও করেছেন। সিলেটের রাজনীতিতেও তাকে নিয়ে আলোচনা কম হয়নি। সেই মুহিবুর রহমান এবার হঠাৎ করেই নামলেন ভোটের মাঠে। বিশ্বনাথ পৌরসভা নির্বাচনে। প্রথম পৌর নির্বাচন হচ্ছে প্রবাসী এই শহরে।

বিশ্বনাথের ভোটে ফের প্রার্থী হলেন মুহিবুর রহমান। তাকে নিয়ে আলোচনা ছিল না। সরকার দল আওয়ামী লীগও তাকে নিয়ে তেমন মাথা ঘামায়নি। কিন্তু মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিনের আগেই মুহিব নীরবতা ভাঙলেন। কয়েকজন অনুসারীদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে হাজির। ঘোষণা দিলেন বিশ্বনাথ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হচ্ছেন। এরপর থেকে মুহিবকে নিয়ে আলোচনা। গত বুধবার রাতভর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন তিনি। সকালে নিজেই এসে মনোনয়নপত্র দাখিল করলেন।
মেয়র পদে মনোনয়নপত্র দাখিলের পর তাকে নিয়ে টেনশনের অন্ত নেই অন্য মেয়র প্রার্থীদের। এলোমেলো হয়ে গেল বিশ্বনাথের ভোটের হিসাব। এখন আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে তিনি পরিচিত। এক সময় জাতীয় পার্টি করতেন মুহিবুর রহমান। সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ছিলেন। কারাবরণ করেছেন। এরপর বেরিয়ে এসে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। নির্বাচন করে বহিষ্কারও হন। এরপর থেকে তিনি আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচিত। তবে- পদ-পদবি নেই তার। কিংবা কোনো কমিটির সদস্যও নয়। আওয়ামী লীগের সঙ্গে উঠাবসাও নেই। মাঝে মধ্যে নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। প্রবাসেই কাটান বেশি সময়। বিশ্বনাথে আসা যাওয়া করেন। বিশ্বনাথ পৌরসভা নির্বাচনে এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা মার্কা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদ। তিনি বিশ্বনাথে আনোয়ারুজ্জামান বলয়ের নেতা হলেও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর সবার সঙ্গে মিলেমিশে রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করছেন।

ফারুক আহমদকে নিয়ে এবার বিশ্বনাথে একাট্টা আওয়ামী লীগ। বিএনপি’র তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রার্থী দেয়া হয়নি। তবে- উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জালাল আহমদ আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রার্থী হবেন। ঘোষণা মতো গতকাল মনোনয়ন পত্র জমা দেয়ার শেষদিনে জালাল আহমদও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ফারুক ও জালালে বিভক্ত ছিল বিশ্বনাথ পৌরসভা নির্বাচনের ভোট। হঠাৎ মুহিব প্রার্থী হওয়ার কারণে নতুন করে মেরূকরণ শুরু হয়েছে। প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে মুহিব জানিয়েছেন- ‘পৌর মেয়রের পরিসর ছোট, চেয়ারও ছোট, ক্ষমতাও কম। তবে, ইচ্ছা, সাহস আর জনগণের সমর্থন থাকলে ছোট পর্যায় থেকেও বড় বড় কাজ করা সম্ভব।’ তিনি বলেন, ‘বিশ্বনাথ একটি অবহেলিত ও উন্নয়ন বঞ্চিত এলাকায় পরিণত হয়েছে। আমি ক্রীড়াঙ্গনে কাজ করে বুঝতে পেরেছি সঠিক নেতৃত্বের অভাবে পৌরসভায় উন্নয়ন ত্বরান্বিত হচ্ছে না।

কিছু উন্নয়ন হলেও সঠিক ও দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনার অভাবে তা থেকে জনগণ কাঙ্ক্ষিত সুফল পাচ্ছে না। এক শ্রেণির লোক বসে আছে উন্নয়নের নামে তারা লুটেপুটে খায়।’ তিনি বলেন, ‘বিশ্বনাথকে এবার ঢেলে সাজাতে হবে, যা পৌর মেয়রের চেয়ার থেকেই সম্ভব। এজন্য বিশ্বনাথের সচেতন মহল ও পৌরবাসীর সমর্থনে মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি। নির্বাচিত হলে পৌরসভায় শিক্ষা, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, বাসিয়া নদীকে নদী রূপে ফিরিয়ে আনা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ড্রেনেজ সমস্যা সমাধানে তিনি কাজ করবেন। বিশেষ করে প্রশাসনকে দালালমুক্ত করে গরিব-অসহায়দের অধিকার নিশ্চিত করা ও শোষণের কবল থেকে মুক্ত করবেন। সবাইকে নিয়ে প্রতিটি জটিল সমস্যা সমাধানে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে তার প্রথম কাজ, যা সম্মিলিত প্রয়াসেই সম্ভব। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাবেক এ চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে, দলের টিকিট দৌড়ের খেলায় আমি নাই। এই চিরাচরিত রাজনীতি করি না। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতিতে বিশ্বাসী।’
১৯৮৫ সালে বিপুল ভোটে বিশ্বনাথে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর উত্থান ঘটে মুহিবুর রহমানের। ১৯৯১ সালেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন মুহিবুর রহমান। একইভাবে ২০১৪ সালেও আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ নির্বাচন করেন মুহিব। ১৯৯১ সালে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন মুহিব। ওই নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জাতীয় পার্টির মকসুদ ইবনে আজিজ লামার কাছে পরাজিত হন তিনি। ২০০৯ সালে জাতীয় পার্টির ইয়াহইয়া চৌধুরীকে পরাজিত করে ফের উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মুহিবুর রহমান। এরপর ওই বছরই জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন তিনি।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে পরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন। কিন্তু উপজেলায় জিতলেও মহাজোটের প্রার্থী সেই ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়ার কাছে পরাজিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর ওই বছরের শেষের দিকে যুক্তরাজ্যে পাড়ি মুহিব।