বৃষ্টির অভাবে বিপর্যয়ের মুখে সিলেটের চা-বাগান

প্রকাশিত: ১:৫৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৩, ২০২২ | আপডেট: ১:৫৮:অপরাহ্ণ, মার্চ ২৩, ২০২২

বছরের শুরুটা ভালোই ছিল সিলেটের চা-বাগানগুলোর জন্য। তাই মার্চের প্রথম সপ্তাহে চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী সিলেটের বাগানগুলোতে উত্সাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে ‘চা-চয়ন’ অর্থাৎ ‘পাতি’ তোলার কাজ শুরু হয়। বলা হয় মার্চের প্রথম সপ্তাহের বৃষ্টি চা-বাগানগুলোর জন্য ‘আশীর্বাদ’। কিন্তু ভাগ্য মন্দ এবার বুঝি সেই আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত চা-বাগানগুলো। তাই কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন নিয়ে শঙ্কিত বাগানসংশ্লিষ্টরা। পাতা তোলার পরিমাণ কমে অর্ধেকেরও নিচে নেমেছে। ‘মার্চের’ বৃষ্টির দেখা নেই। তাপমাত্রাও প্রচণ্ড বেড়েছে। চা-পাতা দূরের কথা গাছ বাঁচানোই কঠিন হয়ে পড়েছে।

সোমবার দুপুরে হাবিব নগর চা-বাগানের ম্যানেজার হুমায়ূন কবীর ইত্তেফাককে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘এমন বৈরী আবহাওয়ার সম্মুখীন হইনি কোনো দিন’। বাগান সংশ্লিষ্টরা বঙ্গোপসাগরের ওপর অবস্থিত ঘূর্ণিঝড় ‘অশিন’ এর গতির ওপর লক্ষ রাখছেন। তারা বলেন, এটি আঘাত করার পর যদি বৃষ্টি নামে। এদিকে বৃষ্টির অভাবে সিলেটের প্রধান ফসল বোরো উৎপাদন নিয়েও চাষিরা শঙ্কিত। বৃষ্টির জন্য রবিবার সিলেটের বৃহৎ হাওর ‘হাকালুকি হাওর’ পাড়ে—বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে দেশে চা উৎপাদনে, রেকর্ড ভঙ্গ করে গত বছর ১০০ কোটি কেজি চা উৎপাদন হয়। এবার সেই রেকর্ড অতিক্রম করে আরেকটি রেকর্ড করার ইচ্ছা ছিল বাগানসংশ্লিষ্টদের। কিন্তু বৈরী আবহাওয়া দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। এই সপ্তাহের মধ্যে বৃষ্টি না হলে বাগানগুলো খরার পতিত হতে পারে, এমন মন্তব্য চা-বাগান শ্রমিকদের।

চা-বাগান ম্যানেজার হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘চা অত্যন্ত সংবেদনশীল কৃষি পণ্য। এর জন্য সুষম আবহাওয়া প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, সিলেটের ৯৯ শতাংশ চা-বাগানে সেচব্যবস্থা নেই। প্রাকৃতিক ‘ছাড়ায়’ পানি আটকে দুর্যোগ মোকাবিলা করা হয় কোনো কোনো বাগানে। কিন্তু বৃষ্টি না হলে ছড়াগুলোও শুকিয়ে যায়। আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করছে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন। দেশের ১৬৪ বছরের চা শিল্পের ইতিহাসে সর্বপ্রথম ২০১৬ সালে উৎপাদন ছিল সাড়ে ৮ কোটি কেজি। ২০১৯ সালে সর্বোচ্চ ৯ কোটি ৭০ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়। পরবর্তী সময়ে সেই রেকর্ড ভঙ্গ করে ২০২১ সালে দেশে চা উৎপাদন হয় ১০০ কোটি কেজি। সারা দেশে ১৬২টি চা-বাগানের মধ্যে ১৩৮টি বাগানই সিলেটে।

নর্থ-সিলেট ভ্যালি টি অ্যাসোসিয়েশন চেয়ারম্যান নোমান হায়দার চৌধুরী ইত্তেফাককে বলেন, যেখানে দৈনিক ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ কেজি চা-পাতা তোলা হতো সেখানে ৩০০ কেজি চা-পাতা তোলা হচ্ছে। আবহাওয়া উষ্ণ থাকায় ‘রেড স্পাইডারের’ আক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। নর্থ সিলেট ভ্যালির ২০টি চা-বাগানসহ মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল, হবিগঞ্জসহ সব কটি বাগান বৃষ্টির অপেক্ষায়। তিনি বলেন, দেশের চা-বাগানের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে সরকারকে আরো ভাবতে হবে। উল্লেখ্য, গত বছর সিলেটের খান বাগানে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ লাখ ২০ হাজার কেজি। কিন্তু তা অতিক্রম করে চা উৎপাদন হয় ৫ লাখ ৩৮ হাজার কেজির বেশি। এবার এই বাগানে ৫ লাখ ৬০ হাজার কেজি উৎপাদন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।