রায়হান হত্যা: আদালতে আকবর

প্রকাশিত: ৬:৪১ পূর্বাহ্ণ, |                          

সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে রায়হান আহমদ হত্যা মামলার আসামি বরখাস্তকৃত এসআই আকবর ভুঁইয়াসহ ৬ পুলিশ সদস্যকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। বুধবার (২২ ডিসেম্বর) সকাল ১১টার দিকে পুলিশি পাহারায় তাদেরকে সিলেট চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আব্দুল মোমেনের আদালতে তাদেরকে হাজির করা হয়। এসময় আদালতে রায়হানের মা’সহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

আদালতে যাদেরকে হাজির করা হয়েছে তারা হলেন, বন্দরবাজার ফাঁড়ির সাবেক ইনচার্জ বরখাস্তকৃত এসআই আকবর, এসআই হাসান, এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল হারুনুর রশীদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটু চন্দ্র দাস।

২০২০ সালের ১১ অক্টোবর সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে সিলেট নগরীর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি থেকে রায়হানকে গুরুতর আহত অবস্থায় এমএসচি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন বন্দরবাজার ফাঁড়ির এএসআই আশেকে এলাহী। সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে হাসপাতালে মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় রায়হানের স্ত্রী হত্যা ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে থানায় মামলা করেন। এরপর বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবরসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিন জনকে প্রত্যাহার করা হয়।

আদালত সূত্র জানায়, ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি ৩০২, ২০১ ধারায় অপরাধ হলেও তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। নির্যাতনে হেফাজতে মৃত্যুর ২০১৩ এর ১৫ (২ ও (৩) ধারায় অভিযুক্তদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ দু’টি আইনের একটিতে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও অপরটিতে সর্বনিম্ন শাস্তি আমৃত্যু যাবজ্জীবন। আমরা তদন্তে চেষ্টা করেছি, যাতে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হয়। আর এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে সিলেটের বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক ইনচার্জ বরখাস্তকৃত এসআই আকবর হোসেনের মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে। ১৯৬২ পৃষ্ঠার এ অভিযোগপত্রে ৬৯ জনকে সাক্ষী রাখা হয়। সাক্ষীদের মধ্যে ১০ জন ১৬৪ ধারায় আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এদের মধ্যে সাতজনই পুলিশ সদস্য। রায়হানের শরীরে ১১১ আঘাতের চিহ্ন নিরূপণকারী ফরেনসিক চিকিৎসককেও মামলায় সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে।

নিহত রায়হান উদ্দিন (৩০) নগরের আখালিয়া নিহারিপাড়ার বাসিন্দা। গত ১০ অক্টোবর রাতে নগরের কাস্টঘর থেকে তাকে সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর কয়েক ঘণ্টা চলে নির্যাতন। ১১ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৬টায় রায়হানকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতপালে নেওয়া হয়। পরে সকাল ৭টা ৫০ মিনিটের দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক। ওই রাতেই হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন।

ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নিহত রায়হানের মরদেহে ১১১টি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এসব আঘাতের ৯৭টি ফোলা আঘাত ও ১৪টি ছিল গুরুতর জখমের চিহ্ন। এসব আঘাতগুলো লাঠি দ্বারাই করা হয়েছে। অসংখ্য আঘাতের কারণে হাইপোভলিউমিক শক ও নিউরোজেনিক শকে মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনিসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো কর্মক্ষমতা হারানোর কারণে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে।