কবি হেলাল হাফিজ স্মরণে মুরারিচাঁদ কবিতা পরিষদ’র স্মৃতিচারণ ও কবিতাপাঠ

প্রকাশিত: ৭:০১ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৭, ২০২৪

কবি হেলাল হাফিজ স্মরণে মুরারিচাঁদ কবিতা পরিষদ’র স্মৃতিচারণ ও কবিতাপাঠ

 

সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মুরারিচাঁদ (এম.সি) কলেজের অন্যতম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুরারিচাঁদ কবিতা পরিষদ (মুকপ) এর আয়োজনে সদ্য প্রয়াত প্রেম ও দ্রোহের কবি হেলাল হাফিজের স্মরণে স্মৃতিচারণ, আলোচনাসভা এবং কবিতাপাঠের আয়োজন করা হয়।

১৭ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার। সকাল ১১ ঘটিকায় সংগঠনটির মহড়া কক্ষে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। মুরারিচাঁদ কবিতা পরিষদের উপদেষ্টা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রফেসর সুনীল ইন্দু অধিকারীর সভাপতিত্বে অনু্ষ্টানটির সঞ্চালনা করেন মুকপের সাংগঠনিক সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম গুলজার। অনুষ্টানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুরারিচাঁদ কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল আনাম মো. রিয়াজ, সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আকমল হোসেন, শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক প্রফেসর মোহাম্মদ তোফায়েল আহাম্মদ।

অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল আনাম মো. রিয়াজ বলেন, লড়াইয়ে, সংগ্রামে, প্রেমে-বিরহে, দ্রোহে যাপিত জীবনের পরতে পরতে হেলাল হাফিজ স্পর্শ দিয়ে গিয়েছেন। শুধু মুক্তিযুদ্ধ কিংবা গণঅভ্যুত্থানের মতো প্রেক্ষাপটে নয়, যেকোনো অন্যায়ে-শোষণে-অবিচারে হেলাল হাফিজের এ উচ্চারণ সবার হয়ে ওঠে। ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ কাব্যগ্রন্থই হেলাল হাফিজকে দিয়েছে অসামান্য খ্যাতি। আধুনিক কবিদের মধ্যে তার ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ কবিকে নিয়ে যায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে। বাংলা সাহিত্যের এই নিভৃতচারী কবি তিনি কবিতার মাধ্যমে আমাদের মাঝে অমর হয়ে থাকবেন। কবির বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।

অনুষ্টানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ বিলাল উদ্দিন, গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দিলীপ চন্দ্র রায়, মুক্তাক্ষর এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক বিমল কর। আরও উপস্থিত ছিলেন মুরারিচাঁদ কবিতা পরিষদের সকল সদস্যবৃন্দ।

মুক্তাক্ষর এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক বিমল কর বলেন, সিলেটের সাহিত্য অঙ্গনে মুরারিচাঁদ কবিতা পরিষদ (মুকপ) ক্যাম্পাস পর্যায়ে থেকেও সাহিত্যের দীপ্তি ছড়াচ্ছেন প্রতিনিয়ত। আজ কবি হেলাল হাফিজের স্মরণে স্মৃতিচারণ, আলোচনা এবং কবিতাপাঠ আয়োজনটি সিলেটের মাটিতে হেলাল হাফিজের স্মরণে এটাই প্রথম আয়োজন।

উল্লেখ্য: ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’, অমর এই পঙ্‌ক্তির রচয়িতা কবি হেলাল হাফিজ গত শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। ‘আমাকে দুঃখের শ্লোক কে শোনাবে? কে দেখাবে আমাকে দুঃখের চিহ্ন কী এমন, দুঃখ তো আমার সেই জন্ম থেকে জীবনের, একমাত্র মৌলিক কাহিনি। আমার শৈশব বলে কিছু নেই, আমার কৈশোর বলে কিছু নেই, আছে শুধু বিষাদের গহিন বিস্তার।’ এমন বিরহ-সংলাপে সাজানো দুর্দান্ত একটা কাব্যময় জীবন কাটানো কবি হেলাল হাফিজ।’ ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ দিয়েই মানুষের হৃদয়ে আসন করে নেন হেলাল হাফিজ। শুধু কবিতার পাঠকের নিরিখে নয়, যে ব্যক্তি অতটাও সাহিত্যের খোঁজখবর করেন না, এমন অনেকের হৃদয়েও দোলা দিয়েছে হেলাল হাফিজের পঙক্তি। ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ কাব্যগ্রন্থভুক্ত প্রতিটি কবিতার শেষে উল্লেখিত তারিখ অনুযায়ী কবিতাগুলো লেখা হয়েছে ১৯৬৯ থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে। ২০১২ সালে ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ কাব্যগ্রন্থের কবিতার সঙ্গে কিছু কবিতা যুক্ত করে প্রকাশ করা হয় তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কবিতা একাত্তর’। সর্বশেষ ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় তৃতীয় কবিতার বই ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ