করোনাকালে ‘মানবিক কার্যক্রমে’ ব্যস্ত ছিলেন এমপি সামাদ

প্রকাশিত: ২:৩২ অপরাহ্ণ, মার্চ ১২, ২০২১ | আপডেট: ২:৩২:অপরাহ্ণ, মার্চ ১২, ২০২১

করোনাকালে দুর্দিনে নির্বাচনি এলাকার জনসাধারণের পাশে ছিলেন সিলেট-০৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস-সামাদ চৌধুরী এমপি। এসময় তার মানবিক সহায়তা ও নানা উদ্যোগের কারণে প্রশংসাও কুঁড়িয়েছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত সেই মহামারি করোনার কাছেই হার মানতে হয়েছে তিনবারের নির্বাচিত এ সংসদ সদস্যকে।

গত বছরের মার্চ মাসে করোনা মহামারির কারণে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর থেকেই নিজের নির্বাচনি এলাকায় ছিলেন তিনি। এসময় সিলেটের অন্য ৫ আসনের এমপিদের মাঠে দেখা যায়নি, তারা ছিলেন ঢাকায়; কিন্তু এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম মাহমুদ উস-সামাদ চৌধুরী। তিনি প্রথম দিন থেকেই নিজের নির্বাচনি এলাকায় অবস্থান নিয়ে ছিলেন জনগণের পাশে।

সরকারি ত্রাণের পাশাপাশি নিজস্ব অর্থায়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন বিপর্যস্ত মানুষের মাঝে। তার ত্রাণ সহযোগিতা পেয়েছিলেন নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে কর্মহীন হয়ে পড়া মধ্যবিত্ত এমনকি প্রবাসে থাকা ব্যক্তির স্বজনরাও। মুঠোফোনে কল পেলেই রাতের আধারে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করতে তিনি।

শুধু তাই নয়; করোনার টানা ছুটিতে সিলেটের শাহজালাল (রহ.) মাজারে অভুক্ত থাকা জালালী কবুতর এবং পুকুরের গজার মাছের জন্য খাবার নিয়েও ছুটে গিয়েছিলেন তিনি। নিজ হাতে তিনি গজার মাছের জন্য ছোট মাছ এবং কবুতরের জন্য ধান ছিটিয়ে দিয়েছিলেন। দুর্যোগকালীর সময়ে তার এমন উদ্যোগ প্রশংসা কুড়িয়েছে সবার কাছে।

এসময় সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন- যেভাবে ভোট চাইতে জনগণের দুয়ারে গিয়েছিলেন এখন সেভাবে খাবার নিয়ে জনগণের দুয়ারে যাচ্ছি। আমি প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশ পালন করছি। সরকারি বরাদ্ধের পাশপাশি নিজের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে অর্ধকোটি টাকা সহায়তার কথা জানিয়েছিলেন তিনি।’

কয়েস বলেছিলেন, ‘প্রশাসনের কর্মকর্তারা যদি মাঠে নেমে কাজ করতে পারেন, আমরা জনপ্রতিনিধিরা কেন পারবো না? শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে এখন সকল জনপ্রতিনিধিকে মানুষের পাশে থাকা উচিত।’

তিনি আরও জানিয়েছিলেন, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের সময় আমি দশম শ্রেণির ছাত্র আর তখনই স্কাউট সদস্য হিসেবে নোয়াখালীতে গিয়েছিলাম রিলিফ নিয়ে। সেই থেকে শুরু আর আজ পর্যন্ত সব দুর্যোগে রিলিফ কর্মকাণ্ডের সঙ্গেই সরাসরি জড়িত থেকেছি।

তিনি আরও বলেছিলেন, ‘ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ প্রবাসী অধ্যুষিত একটি এলাকা। প্রায় দুই মাস ধরে অনেক প্রবাসী দেশের বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারছেন না। তাদের কথা চিন্তা করে মুঠোফোনে সেবা দিচ্ছি। নীরবে তাদের বাড়ি সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।’

তবে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার এক বছরের মাথায় সেই করোনার কাছেই হার মানলেন টানা তিনবার নির্বাচিত এ জনপ্রতিনিধি। তার মৃত্যুতে নির্বাচনি এলাকা দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলায় নেমেছে শোকের ছায়া। শোকের ছায়া নেমেছে সিলেটের রাজনৈতিক মহলেও।

ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত আলী বলেন, করোনার দুঃসময়ে অনেক সাংসদ নির্বাচনী এলাকায় ছিলেন না। ব্যতিক্রম শুরু কয়েস। তিনি করোনার পুরোটা সময় এলাকায় অবস্থান করে মানুষকে সহায়তা করেছেন। তিনি ছিলেন আমাদের দুর্দিনের বন্ধু। আজ তিনিই করোনায় চলে গেলেন।

তার নির্বাচনী এলাকার জনসাধারণের সাথে কথা বলে জানা যায়, ওই সময়ে এমপি ফেঞ্চুগঞ্জে নিজ বাড়ির সামনে মাছ ও এবং নানা রকম সবজি সাজিয়ে রাখতেন। আর সেখান থেকেই তিনি স্থানীয় জনতার মাঝে এসব বিতরণ করতেন। তাকে কোন প্রবাসী পরিবারের কেউ ফোন দিয়ে খাদ্য সামগ্রী চাইলে তিনি গোপনে তা পৌঁছে দেবার ব্যবস্থাও করতেন। এছাড়া ধান কাটার সময়ে তিনি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে ধান কাটা, রমজানে অসহায় মানুষের মাঝে ইফতার সামগ্রী পৌঁছে দেয়াসহ মানবিক বিভিন্ন কর্মকান্ডসহ নির্বাচনি এলাকার সার্বিক উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। আজ তিনি নেই; তারা তা ভাবতেও পারছেন না।

বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এর আগে রোববার (০৭ মার্চ) রাতে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। আর সোমবার (০৮ মার্চ) তার দেহে ধরা পড়ে করোনার সংক্রমণ। যদিও গত ১০ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গনে তিনি করোনার টিকা নিয়েছিলেন, তারপর তার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও ছিলনা।

এমপি মাহমুদ উস সামাদ ধর্ম ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি এবং শেখ রাসেল শিশু কিশোর পরিষদের মহাসচিব। তিনি ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর আর পেছনে থাকাতে হয়নি তাকে। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের দশম এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৫৫ সালের ৩ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। তিনি স্ত্রী এবং এক ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ অব্যাহত রয়েছে।