ডাক্তারকে বাসায় ডেকে জোর করে বিয়ে নাকি পরকীয়া!

প্রকাশিত: ৩:১৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২১ | আপডেট: ৩:১৮:অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২১

রাজশাহীতে একজন চিকিৎসককে আটকে রেখে জোর করে বিয়ে করা ও ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগে এক কথিত কাজী ও এক নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পুলিশ বলছে, পূর্ব পরিচয়ের সূত্রে চিকিৎসককে বাসায় ডেকে ‘সন্ত্রাসী বাহিনী’ দিয়ে জোর করে বিয়ে করেছেন ওই নারী।

মহানগরীর অভিজাত পদ্মা আবাসিক এলাকায় গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে এ ঘটনা ঘটে। পর দিন চন্দ্রিমা থানায় মামলা হলে বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ এক নারীসহ কাজীকে গ্রেফতার করেছে। এ চক্রের সঙ্গে জড়িত আরও কয়েকজনকে পুলিশ গ্রেফতারের চেষ্টা করছে।

চন্দ্রিমা থানার পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা আবাসিক এলাকার ৮নং সড়কের ৪৩২নং চারতলা বাসার নিচতলায় কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে ভাড়া থাকেন রাজশাহীর বাগমারার পাপিয়া সুলতানা পপি (৩৫)। পপির স্বামী ঢাকায় চাকরি করেন বলে বাড়ির মালিককে জানিয়ে তিনি ভাড়া নিয়েছিলেন বছর দেড়েক আগে।

এ ভবনের তিনতলায় থাকতেন রাজশাহীর প্রাইভেট বারিন্দ মেডিকেল কলেজের শিক্ষানবিস চিকিৎসক মাহবুব হোসেন। মাহবুবের বাড়ি নীলফামারী জেলার ডিমলায়। একই ভবনে থাকার সুবাদে দুই পরিবারের মধ্যে যোগাযোগ ছিল। বাসাটি রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান হিসাব কর্মকর্তা শহীদুল ইসলামের।

সম্প্রতি ডা. মাহবুব এমবিবিএস শেষ করে বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তাই ওই বাসা ছেড়ে মাহবুব আবাসিকের আরেক বাসায় বন্ধুর সঙ্গে থাকতে শুরু করেন।

অভিযোগ মতে, অসুস্থতার কথা বলে ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে পাপিয়া সুলতানা পপি ফোন করে মাহবুবকে বাসায় আসতে বলেন। মাহবুব কিছু ওষুধপত্র নিয়ে পপির বাসায় যান। সেখানে কিছুক্ষণ পর চারজন ‘সন্ত্রাসী’ বাসায় ঢুকে মাহবুবকে বেঁধে ফেলে মারধর করেন এবং তার কাছ থেকে একটি কাবিননামা ও কয়েকটি ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। কয়েক ঘণ্টা পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার মাহবুবকে ফোন করে পপি ও তার সহযোগীরা জানান, পপির সঙ্গে তার বিয়ে হয়ে গেছে। কাবিননামা তাদের কাছে আছে। ছাড়াছাড়ি বা ডিভোর্স করতে চাইলে ২০ লাখ টাকা দিতে হবে। মাহবুব এদিন বিকালে চন্দ্রিমা থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন।

মামলা রেকর্ডের পর পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতেই পদ্মা আবাসিকের ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে পপিসহ বিয়ের কথিত কাজীকে গ্রেফতার করেন। অভিযানকালে বিয়ের কাবিননামাসহ ফাঁকা স্ট্যাম্পও উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার বিকালে তাদের আদালতে পাঠানো হয়।

চন্দ্রিমা থানার ওসি সিরাজুম মুনীর বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া সুলতানা পপি জানিয়েছেন– একই ভবনে থাকার সুবাদে ডা. মাহবুবের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাকে বিয়ে করার অঙ্গীকারও করেছিলেন তিনি। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি মাহবুব রাজশাহী ছেড়ে ঢাকায় যাবে জানতে পেরে তিনি তাকে বাসায় ডেকে নিয়ে চাপ দিয়ে বিয়ে করেন। তাকে ব্ল্যাকমেইল করা হয়নি।

তবে এ বিষয়ে ডা. মাহবুবের বক্তব্য জানা যায়নি। পুলিশ অবশ্য বলছে– এটি একটি প্রতারণার ঘটনা। পপির একটি কলেজ পড়ুয়া মেয়ে রয়েছে। আর মাহবুবের বয়স ২৬ বছর।

অন্যদিকে পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, পদ্মা আবাসিক এলাকাটি রাজশাহীর অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত। ফলে এ এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে দেহব্যবসাসহ নানাবিধ অনৈতিক কর্মকাণ্ড বেশি ঘটছে।

পুলিশ এ কারণে ভাড়াটিয়াদের বিস্তারিত তথ্য চেয়ে পাঠালেও অনেক বাড়ির মালিক তা দিচ্ছেন না। ফলে আবাসিকে ভাড়াটিয়ারা কারা কী পেশায় আছেন তা পুলিশ আগভাগে জানতে পারেন না। এ কারণে এমন প্রতারণার ঘটনা ঘটছে।