সিদ্দিকুর রাহমান, স্পেনঃ
স্পেনে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে মাদ্রিদস্থ দূতাবাস মিলনায়তনে দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দের উপস্থিতিতে আলোচনা সভা ও সন্ধ্যায় স্থানীয় কাসা এশিয়ার সম্মেলন কক্ষে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, স্প্যানিশ পদস্থ কর্মকর্তা, স্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকবৃন্দ এবং প্রবাসী বাংলাদেশীদের উপস্থিতিতে বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সকালে দূতাবাস প্রাঙ্গনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরনের মধ্য দিয়ে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের কর্মসূচী শুরু করেন স্পেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদ। পরে দূতাবাস মিলনায়তনে পবিত্র কোরআন থেকে তিলওয়াতের মাধ্যমে আলোচনা সভা শুরু হয়। আলোচনা সভায় মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। দিবসটির আলোচনায় রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাংলা ভাষার জন্য আত্মোৎসর্গকারী বীর শহিদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
আলোচনা সভা শেষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ২১ ফেব্রুয়ারি শাহাদাত বরণকারী সকল শহীদের রুহের মাগফিরাত এবং দেশের সুখ, সমৃদ্ধি ও উন্নতি কামনায় মোনাজাত করা হয়।
স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬ টায় কাসা এশিয়া এর সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে বিশেষ আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আলোচনার শুরুতেই সম্মেলন কক্ষে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করেন। দূতাবাসের কাউন্সেলর (লেবার উইং) মো. মোতাসিমুল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত ভাষা দিবসের আলোচনায় রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদ বাংলা ভাষার পরিধি বিস্তৃতির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আমাদের বাংলা ভাষা বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম ভাষা। প্রায় ২৫০ মিলিয়ন মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। চীনা, স্প্যানিশ ও ইংরেজীর পরই এর স্থান। বাংলাদেশ ছাড়াও বাংলা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসামের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ কয়েকটি অঞ্চলে সরকারী ভাষা হিসেবে স্বীকৃত। এছাড়াও ভারতীয় সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত ২৩ টি সরকারী ভাষার মধ্যে বাংলা অন্যতম। এছাড়া আফ্রিকার সিয়েরা লিয়নের দ্বিতীয় সরকারী ভাষা বাংলা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের ধারায় রয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সবাইকে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগের আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
সাংস্কৃতিক পর্বটি ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ গান দিয়ে শুরু হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় বাংলাদেশি শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, স্প্যানিশ পদস্থ কর্মকর্তা, স্পেন এর ‘কমপ্লুটেন্সে ই রেই খুয়ান কার্লোস’ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকবৃন্দ, বাংলাদেশ দূতাবাসের দূতালয় প্রধান এটিএম আব্দুর রউফ মন্ডল, কমার্শিয়াল কাউন্সেলর রেদোয়ান আহমেদ, পলিটিক্যাল কাউন্সেলর দ্বীন মোহাম্মদ ইমাদুল হক, আওয়ামী লীগ স্পেন শাখার সভাপতি এসআরআইএস রবিন, সিনিয়র সহ সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম সেলিম, সহ সভাপতি একরামুজ্জামান কীরন প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ইন স্পেন এর সভাপতি আল মামুন, সাধারণ সম্পাদক মুরাদ মজুমদার, ভালিয়েন্তে বাংলার সভাপতি মো. ফজলে এলাহি, স্পেন বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি সাহাদুল সুহেদ,সদস্য সিদ্দিকুর রহমান প্রমূখ।