সেদিন কফিনে জিয়ার লাশ ছিলো না: কাদের

প্রকাশিত: ১২:৩৮ অপরাহ্ণ, |                          

কয়েক হাজার মানুষ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জানাযা পড়লেও সেদিন কফিনে জিয়ার লাশ ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, হাজার হাজার মানুষের জানাযা পড়া আর কফিনে জিয়াউর রহমানের লাশ থাকা না থাকা এটা কি এক কথা। মানুষতো নিহত প্রেসিডেন্টের জন্য জানাযা পড়তে আসছিল, কিন্তু সেই কফিনে যে প্রেসিডেন্টের লাশ নেই এটাতো মানুষ জানতো না।

‘পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউল হক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হলেন, ফয়সাল মসজিদের সামনে ইসলামাবাদে এর চেয়েও বেশি মানুষ হয়েছিল, যতলোক জিয়াউর রহমানের জন্য ঢাকায় হয়েছিল। কিন্তু ওই কফিনেও জিয়াউল হক নেই, এই কফিনেও জিয়াউর রহমান নেই। এটাই হলো সত্য। সত্যকে এখন লুকাতে চাইছেন, কিন্তু সত্য থেকে পালিয়ে যেতে পারবেন না। সত্য বেরিয়ে আসবে।’

শনিবার ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন এর আয়োজনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড’ শীর্ষক একটি সেমিনারে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন সেতুমন্ত্রী।

সেমিনারে ১৫ আগস্টের পর জিয়ার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈধতা দেয়ার অপচেষ্টা করা হয়। ১৫ আগস্টের হত্যাকারীকে কে আশ্রয় দিয়েছে? কে প্রশ্রয় দিয়েছে? কে নিরাপদে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে? কে নির্বাসন করেছে? কে পুরষ্কৃত করেছে? পলাশীর কুম্ভকার মীর জাফর। বাংলার কুম্ভকার খন্দকার মোশতাক। পলাশীর সেনাপতি ইয়ার লতিফ বাংলাদেশের সেনাপতি জিয়াউর রহমান। পুরষ্কার, নির্বাসন, আইনি বৈধতা, এই কাজটি কে করেছে। এটা করেছে জেনারেল জিয়া।

‘পঞ্চম সংশোধনী কিভাবে অস্বীকার করবেন মির্জা ফখরুল। নিরাপদে খুনিরা বিদেশে গেল, কে পাঠাল? এটা কিভাবে অস্বীকার করবেন। বিভিন্ন দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি এই খুনিরা, এটা কিভাবে অস্বীকার করবেন।’

‘খন্দকার মোশতাকের চীপ অব আর্মি স্টাফ হয়ে গেলেন সঙ্গে সঙ্গে, এটা কিভাবে অস্বীকার করবেন? জয় বাংলাকে নিষিদ্ধ করল কে? ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ হল, কে করল? এই সব অপকর্মের হোতা কে? ইতিহাসের সত্যে পাশ কাটিয়ে যেতে পারেন কিন্তু ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না।’

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, এখনো দেশে বিদেশে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, ষড়যন্ত্রের ছক আঁকা হচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীল করে, ঘোলা পানিতে কেউ কেউ মাছ শিকার করতে চায়। দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশে ক্ষমতার পরিবর্তন, দেশের সাম্প্রদায়িক একটি মহলকে উৎসাহিত করেছে। এই সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে বিএনপি। খুনি, ঘাতকদের নির্ভরযোগ্য ঠিকানা হচ্ছে বিএনপি।

সংগঠনটির সভাপতি এ কে আজাদের সভাপতিত্বে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এন্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ এর অধ্যাপক ড. খোন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন ও ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক এ. কে. এম. আফজালুর রহমান বাবুর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন। মূল প্রবন্ধের উপর আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহ এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী (পারভেজ) এবং মহাসচিব জনাব রঞ্জন কর্মকার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোল্লা মোহাম্মাদ আবু কাওছার প্রমুখ।

ঢাবি উপাচার্য বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে সেকুলারিজম তা না চাইনিজ না রাশিয়া। তার মতাদর্শ সম্পূর্ণ আলাদা এক মডেল। এটি বাংলাদেশ এবং বাঙালির মডেল। ধর্মীয় মূল্যবোধ সেটির প্রতিও বঙ্গবন্ধুর শ্রদ্ধা, সেইসাথে অন্য ধর্মমতকে বিকশিত করা এবং সকল ধর্মের প্রতি একটি সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গি রেখে সেই মূল্যবোধকে বিকাশ ঘটানো। এটি বঙ্গবন্ধুর নিজস্ব এক মডেল যা ওই দুটির সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। বর্তমান বাংলাদেশ তার মডেলের উপর নির্ভর করে চলছে এবং বিশ্ব অবাক করে তাকিয়ে আছে বাংলাদেশের দিকে। আজকে যতই আমরা বঙ্গবন্ধুর চর্চা করছি ততই তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন বলেন বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ও বঙ্গবন্ধুর অবস্থান খুবই সুদৃঢ়। তার শক্তি হলো বঙ্গবন্ধুর নীতিদর্শন। বঙ্গবন্ধুর সেই নীতিদর্শন বর্তমানে যখন বঙ্গবন্ধু কন্যা বাস্তবায়ন করতেছে তখন বিশ্বকে হতচকিত করছে।