
প্রেম করে বিয়ে। অতঃপর কিছুদিন যেতে না যেতেই টাকার জন্য চাপাচাপি। তারপর শুরু হয় রেষারেষি। স্বামী পরে বুঝতে পারেন, তিনি প্রতারকের খপ্পরে পরেছেন। পেছনে আছে কোনো চক্র। কাছাকাছি সময়ে স্বামী স্ত্রী দু’জনই একে অপরের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন।
সম্প্রতি সংসার ভেঙ্গে যাওয়া তানভীর কামাল তন্ময় নামের এক যুবকের সঙ্গে এমনই এক ঘটনা ঘটেছে। তার
স্ত্রী দাবিদার রামিসা তাবাসসুম আলিনাও অভিযোগ করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। তবে পুলিশের সূত্র বলছে, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এটি একটি চক্র। বিয়ে করে টাকা দাবিদার চক্র বেশ সক্রিয় রাজধানীতে। এদের টার্গেট উচ্চবিত্ত ঘরের যুবক, ব্যবসায়ী ও বিত্তবান মানুষ। এ ঘটনা তারই অংশ কি না অনুসন্ধানের পর জানা যাবে।
ইতোমধ্যে স্ত্রীর নির্যাতনে স্বামী তানভীর কামাল তন্ময় রাজধানীর আদাবর থানায় গেল ১২ আগস্ট মামলাও করেছেন। কথা বলার জন্য খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না আলিনাকে। ফেসবুকে তিনি দাবি করেছেন, তিনি আত্মগোপনে আছেন।
স্ত্রীর বিরুদ্ধে তথ্য গোপন এবং প্রতারণার মাধ্যমে বিয়েসহ নানা অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি করার কথা স্বীকার করেছেন আদাবর থানা প্রশাসন। ম্যাপললিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষার্থী দাবি করে রামিসা তাবাস্সুম আলিনাও তানভীর কামালের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে।
ঘটনা অনুসন্ধানে জানা যায়, এ বছরের মার্চ মাসে রামিসা তাবাস্সুম আলিনার সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয় তানভীরের। কিন্তু বিয়ের পরে তিনি জানতে পারেন তার স্ত্রী আলিনা নিজেকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দাবি করলেও তিনি দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। বিয়ের আগে পরিচয় দিয়েছিলেন তার বাবা ও মামা এদেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি। এমনকি প্রতিষ্ঠিত এক শিল্পগোষ্ঠীর নামও বলেছিলেন।
বিয়ের সময় মিথ্যা বাবা-মা সাজিয়ে উপস্থাপন করা, উচ্ছৃঙ্খল জীবন-যাপন, একাধিক নামে পাসপোর্ট, জন্ম সনদ ব্যবহার করে নানাভাবে প্রতারণা করেছেন বলে দাবি করেন তানভীর।
প্রচ্ছদ রাজধানী
ফেসবুকে পরিচয়, বিয়ের পর স্বামীকে ব্লাকমেইলের অভিযোগ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:০০, ২২ আগস্ট ২০২১ | আপডেট: ০১:০৪, ২২ আগস্ট ২০২১
A- A A+
স্বামী স্ত্রী দু’জনই একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন
স্বামী স্ত্রী দু’জনই একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন
প্রেম করে বিয়ে। অতঃপর কিছুদিন যেতে না যেতেই টাকার জন্য চাপাচাপি। তারপর শুরু হয় রেষারেষি। স্বামী পরে বুঝতে পারেন, তিনি খপ্পরে পরেছেন। পেছনে আছে কোনো চক্র। কাছাকাছি সময়ে স্বামী স্ত্রী দু’জনই একে অপরের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন।
সম্প্রতি সংসার ভেঙ্গে যাওয়া তানভীর কামাল তন্ময় নামের এক যুবকের সঙ্গে এমনই এক ঘটনা ঘটেছে। তার স্ত্রী দাবিদার রামিসা তাবাসসুম আলিনাও অভিযোগ করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। তবে পুলিশের সূত্র বলছে, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এটি একটি চক্র। বিয়ে করে টাকা দাবিদার চক্র বেশ সক্রিয় রাজধানীতে। এদের টার্গেট উচ্চবিত্ত ঘরের যুবক, ব্যবসায়ী ও বিত্তবান মানুষ। এ ঘটনা তারই অংশ কি না অনুসন্ধানের পর জানা যাবে।
ইতোমধ্যে স্ত্রীর নির্যাতনে স্বামী তানভীর কামাল তন্ময় রাজধানীর আদাবর থানায় গেল ১২ আগস্ট মামলাও করেছেন। কথা বলার জন্য খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না আলিনাকে। ফেসবুকে তিনি দাবি করেছেন, তিনি আত্মগোপনে আছেন।
স্ত্রীর বিরুদ্ধে তথ্য গোপন এবং প্রতারণার মাধ্যমে বিয়েসহ নানা অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি করার কথা স্বীকার করেছেন আদাবর থানা প্রশাসন। ম্যাপললিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষার্থী দাবি করে রামিসা তাবাস্সুম আলিনাও তানভীর কামালের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে।
ঘটনা অনুসন্ধানে জানা যায়, এ বছরের মার্চ মাসে রামিসা তাবাস্সুম আলিনার সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয় তানভীরের। কিন্তু বিয়ের পরে তিনি জানতে পারেন তার স্ত্রী আলিনা নিজেকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দাবি করলেও তিনি দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। বিয়ের আগে পরিচয় দিয়েছিলেন তার বাবা ও মামা এদেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি। এমনকি প্রতিষ্ঠিত এক শিল্পগোষ্ঠীর নামও বলেছিলেন।
বিয়ের সময় মিথ্যা বাবা-মা সাজিয়ে উপস্থাপন করা, উচ্ছৃঙ্খল জীবন-যাপন, একাধিক নামে পাসপোর্ট, জন্ম সনদ ব্যবহার করে নানাভাবে প্রতারণা করেছেন বলে দাবি করেন তানভীর।
ফেসবুকে আলিনা দাবি করেছেন, তিনি আত্মগোপনে আছেন
তানভীর কামাল জানান, তার সন্দেহ ঘণীভূত হয় তখন, যখন আলিনার ব্যাংক একাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেন দেখতে পায়। পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ধনী ও ব্যবসায়ীদের ছেলেদের ফাঁদে ফেলা আলিনার এক ধরণের পেশা।
এ বিষয়ে আদাবর থানার উপ-পরিদর্শক এবং তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান বলেন, তানভীর কামাল তন্ময় নামে এক ব্যক্তি তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রতারণাসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে জিডি করেন। ১২ আগস্ট মামলাও করেন। অভিযুক্ত নারীর সঙ্গে কথা বললে প্রকৃত বিষয়টি জানা যাবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
তানভীর ও তার আত্মীয়স্বজনকে চাপে রাখতে, তাবাসসুম আলিনা (১৯) ভিডিও বার্তায় এরইমধ্যে নানান অভিযোগ করেছেন। যৌতুকের দাবিতে স্বামী নির্যাতন করেছে তাকে এমনও দাবি ঐ ভিডিও বার্তায় তিনি করেছেন।
তবে সাবেক স্বামী তানভীর কামাল তন্ময় জানান, তার (আলিনার) এসব অভিযোগ প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই না। এটা নিছক স্টান্টবাজি ও প্রতারণার কৌশলমাত্র। কারণ আলিনা সবসময় জোরগলায় বলেন যে, তিনি যাই করুন না কেনো আইন তার পক্ষেই যাবে।
গেল ১০ আগস্ট ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তা ছড়িয়ে দেয় আলিনা। সেখানে তিনি জানান, ফেসবুকে পরিচয়ের পাঁচ মাসের মাথায় চলতি বছরের ১২ মার্চ তন্ময়ের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। পরে ২০ মার্চ তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার স্বামী রাজধানীর আদাবরের একটি বাসায় নিয়ে যায়। বিয়ের তিন দিনের মাথায় তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে আট লাখ টাকা দেনা শোধের কথা বলে নিয়ে নেয় তন্ময়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মা-বাবার মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ায় আলিনা শ্যামলীতে নানার বাড়িতে বেড়ে উঠেছেন। চলতি বছর তার ‘ও’ লেভেল পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল।
আলিনার বিষয়ে আরও জানা গেছে, নানুর বাসা তার স্থায়ী ঠিকানা হওয়ায় সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ করতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার দাবি, পুলিশ সেই অভিযোগ নেয়নি। এ বিষয়ে আলিনার বক্তব্য জানতে তার ব্যবহার করা দুটি মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়।
অন্যদিকে তন্ময় জানান, ফেসবুকের মাধ্যমে আলিনার সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়। বন্ধুত্বের এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এই সম্পর্কের সূত্র ধরে আলিনাকে তানভীর কামাল তন্ময় বিয়ে করবেন বলে তার পরিবারকে জানায়। তখন তন্ময়কে তার পরিবার বলেন, আলিনার বায়োডাটা এনে দিতে। আলিনার সেই বায়োডাটায় লিখা ছিল তার বাবা একজন পিএইচডিধারী, মামা শিল্পপতি। এছাড়াও আলিনা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্র্যাকের শিক্ষার্থী।
তন্ময় আরও জানান, বিবাহিত জীবনের কয়েক মাস চলে যাওয়ার পর তিনি লক্ষ্য করেন আলিনা তার বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অনলাইন ক্লাস করছেন না। পরে এ বিষয়ে তন্ময় খোঁজ খবর নিয়ে দেখেন, আলিনা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয়। তাকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে।
এসব বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে তন্ময়ের। এক পর্যায়ে আলিনার প্রতি তিনি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। ভাবতে বাধ্য হন তার স্ত্রী নিছকই একজন প্রতারক।
তন্ময়ের দাবি, বিয়ের আগে রাজধানীর আদাবর এলাকায় বাসা নেন তিনি। বিয়ের পর আলিনাকে নিয়ে তিনি ওই বাসায় উঠেন। কিন্তু বিয়ের কিছু দিন পরই তন্ময় জানতে পারেন, মা-বাবার যে পরিচয় আলিনা তাকে দিয়েছিলেন তা সত্য নয়। বাবার পরিচয় ঠিক থাকলেও তার মায়ের পরিচয় আলিনা লুকিয়েছে।
তন্ময় এসব বিষয়ে আলিনাকে জিজ্ঞাসা করলে আলিনা জানায়, তার মা-বাবার মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে অনেক দিন আগে। তার মা এখন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। তার নানার বাড়িতে সে বড় হয়েছে। তন্ময় তার স্ত্রীর বিভিন্ন ফাইল ঘেঁটে একটি জিডির কপি পান। সেই জিডি আলিনার বিরুদ্ধে তার নিজের মা আগেই করেছিলেন। যাতে আলিনার বেসামাল জীবনযাপনের ইঙ্গিত ছিল। এ বিষয়ে আলিনাকে প্রশ্ন করলে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি-এমনটাই দাবি করেন তানভীর কামাল তন্ময়।
আলিনার ব্যাংক একাউন্টে ৮৬ লাখ টাকার একটি লেনদেন হয়েছিল। এটি দেখে তো তানভীর কামাল তন্ময়ের সন্দেহ আরও দানা বাঁধে। এত বিশাল অংকের টাকা কোথায় থেকে এসেছে -জানতে চাইলে আলিনা কোনো উত্তর দিতে পারেনি। পরে আলিনা যেখানে চাকরি করতেন সেখানে যোগাযোগ করেও কোনো সদুত্তর পান না তন্ময়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১৭ জুন আলিনা ও তন্ময়ের মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়।
তন্ময় বলেন, গত ১৭ জুন রাতের ঘটনার পর আলিনার সঙ্গে বিষয়টি পারিবারিকভাবে মিটমাট করার চেষ্টা করি। তখন আলিনা আমার কাছে তাৎক্ষণিকভাবে ৫৪ লাখ টাকা দাবি করে। এত টাকা আমার পক্ষে দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব না। এছাড়া সে এখন আমার পরিবারকে জড়িয়ে নানা ধরনের মিথ্যাচার করছে। এই বিয়ের সঙ্গে আমার পরিবারের কোনো সম্মতি না থাকায় সেখানেও আমি হেয় হচ্ছি।
তন্ময় বলেন, আমার ধারণা আলিনা একটি চক্রের সদস্য। সে ওই চক্রের মাধ্যমে আমাকে ব্ল্যাকমেইলিং করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। তার এই অপচেষ্টা ও প্রতারণার কারণে গত ১১ আগস্ট আমি আদাবর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি। পরে মামলা করতে বাধ্য হই।
জানতে চাইলে তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ভুক্তভোগী ওই নারী তেজগাঁও বিভাগের কোনো থানায় সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ করেননি। তিনি অভিযোগ করলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে তন্ময়ের মামলার ব্যাপারটি পুলিশের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা জানেন। ইতোমধ্যে তদন্তও শুরু হয়েছে বলে জানান এক কর্মকর্তা।