অনলাইনে সাড়া মেলেনি, হাটে উঠছে কোরবানির পশু

প্রকাশিত: ৪:৫৪ অপরাহ্ণ, |                          

প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জে স্থায়ী ও অস্থায়ী মোট ৭টি পশুর হাট বসতে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ২টি পশুর হাট অনুমতি পেলেও বাকি ৫টি হাট অনুমোদনের অপেক্ষাধীন আছে। অনুমতি পাওয়া দুটি হাটে ইতোমধ্যেই গবাদিপশু উঠতে শুরু হয়েছে। তবে ব্যাপারীরা বলছেন, অনলাইনে ক্রেতাদের সাড়া না পাওয়ায় হাটে তুলছেন গবাদিপশু।

কোরবানির পশুর হাটগুলোর মধ্যে রয়েছে- আগনগর আমাগিচা খেলার মাঠ, জিনজিরা বাজার হাট, শুভাঢ্যা হাসনাবাদ বালুর মাট, রুহিতপুরের সৈয়দপুর হাট, মধু সিটি পশুর হাট, কলাতিয়া খাড়াকান্দি মাদ্রাসা হাট এবং রাজাবাড়ী কলেজ মাঠ। ইতোমধ্যে গত দুদিন ধরে হাটগুলোতে স্থানীয় খামার ও আশপাশের জেলাগুলোর ব্যাপারীরা হাটে তুলছেন কোরবানির পশু। হাটে ভিড়ছেন ক্রেতাও। কিন্তু এখন পর্যন্ত গবাদিপশু বিক্রি শুরু হয়নি।

কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য মতে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে কেরানীগঞ্জে এ বছর ৬৫৬টি খামারে প্রায় ১২ হাজার পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। তাছাড়া আশপাশের জেলাগুলো থেকে প্রায় ১০ হাজার গবাদিপশু আসবে হাটে।

করোনাকালীন এসময়ে স্থানীয় খামারী ও জেলা থেকে আগত ব্যাপারীরা পশু বিক্রি নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন। অনলাইনে পশু বিক্রির চেষ্টা করলেও তেমন সাড়া না পেয়ে পশুগুলো হাটে তুলেছেন তারা। কেউ কেউ বলছেন, অনলাইনে পশু বিক্রির নিয়ম সম্পর্কে তাদের কোন ধারনাই নাই।

কেরানীগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি হাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাটগুলোতে ধীরে ধীরে গবাদিপশু নিয়ে আসা শুরু করছেন ব্যাপারীরা। তবে হাটে এখনও পর্যন্ত ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়নি।

গবাদিপশুর ব্যাপারীরা বলছেন, করোনার কারণে অনলাইনে বিক্রি করতে না পেরে পশু হাটে আনা হচ্ছে। করোনার ঊর্ধ্বগতিতে দীর্ঘ দিন লকডাইন থাকায় অনেকের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়া এখন পর্যন্ত কোরবানির পশু কেনা শুরু হয়নি।

উপজেলার বেউতা এলাকার খামারী আব্দুল মালেক বলেন, প্রতি বছর কোরবানির ঈদের আগমুহূর্তে আমাদের খামারের প্রায় সব গরু বিক্রি হয়ে যায়। তবে এ বছর অনলাইনের পশু বিক্রির নির্দেশনা মতে তেমন বিক্রি হয়নি। মাত্র ১০ থেকে ১৫টি গরু বিক্রি হয়েছে। শতাধিক গরু হাটে নিয়ে বিক্রির প্রস্তুতি চলছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে ৪২টি গবাদিপশু বিক্রির জন্য কেরানীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী জিনজিরা হাটে এসেছেন রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ক্রেতারা দাম করছেন না, একটিও এখন বিক্রি হয়নি। অনলাইনে গরু বিক্রির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনলাইন ৫ থেকে ৬ টি গরু বিক্রি হয়েছে তবে চাহিদা নেই বললেই চলে। গত ৩ বছর ধরে এই হাটে পশু বিক্রি করতে এসে লাভবান হই। আশা করছি এবারও গরু বিক্রি শুরু হবে।

গোলদার হোসেন তিনিও চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে কোরবানীর পশু বিক্রি করতে জিনজিরা হাটে আসেন। তিনি বলেন, ক্রেতারা শুধু দাম হাঁকছেন। এখন পর্যন্ত বিক্রি শুরু হয়নি। দুই এক দিনের মধ্যে গরু বিক্রি শুরু হয়ে যাবে।

পাবনা জেলার সামসুল পারমনিক জুবরাজ নামের বিশাল আকৃতির একটি গরু নিয়ে আসছেন কেরানীগঞ্জের আগানগর আমবাগিচা খেলার মাঠ পশুর হাটে। যার মূল্য চাচ্ছেন ১৪ লাখ টাকা। উচ্চতা ৬ ফিট ও লম্বা ১০ ফিট। ওজন প্রায় ৩০ মন হবে। বয়স ৩ বছর। ক্রেতারা দাম বলেছেন ১০ লাখ টাকা। আরেকটু বেশি হলে গরুটি বিক্রি করবেন তিনি। অনলাইনে বিক্রয়ের বিষয়ে জনাতে চাইলে তিনি বলন, অনলাইন বলতে তার কোনা ধরনা নেই।

ফরিদপুর জেলা ভাঙ্গা থানার মীর স্কেন্দার কালামানিক নামে একটি গরু নিয়ে কেরানীগঞ্জের আগানগর আমাবাগিচা খেলার মাঠ হাটে এসেছেন। যার মূল চাচ্ছেন ৬ লাখ টাকা। ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত মূল্য বলেছেন ক্রেতারা। এখন পর্যন্ত অনেক সময় আছে, অন্তত ৫ লাখ টাকা বিক্রি করতে না পারলে লসের মুখ দেখতে হবে তাকে।

পাবনা জেলা থেকে আগানগর আমবাগিচা খেলার মাঠ হাটে আগত হাবিবুর রহমান বলেন, নদীর পাড়ে বাড়ি হওয়ায় গরু বিক্রির জন্য ছবি ও মূল্য অনলাইনে দিতে পারিনি। তবে এই হাটে এর আগেও গরু বিক্রি করতে এসে লাভবান হয়েছি। এবারও লাভবান হবো।

উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা অমিত দেবনাথ বলেন, প্রতি বছরের মতো এ বছরও হাট ইজারা নেয়ার জন্য অনেকেই আবেদন করেছেন। ইতোমধ্যে ২টি হাট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, একটি বাৎসরিক ও বাকী ৫টি অনুমোদনের অপেক্ষায়। অনুমোদিত হাটগুলোতে পশু উঠছে। অনলাইনেও গবাদিপশু বিক্রি চলছে।