শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে ‘জাতীয় মানদণ্ড আইন’ চায় বিএনপি

প্রকাশিত: ৪:১১ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৫, ২০২১ | আপডেট: ৪:১১:অপরাহ্ণ, জুলাই ১৫, ২০২১

কল-কারখানার দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে ‘জাতীয় মানদণ্ড আইন’ প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুড কোম্পানির ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত-আহত শ্রমিকদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের দাবি জানাতে গিয়ে দলের পক্ষ থেকে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এ দাবি জানান। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, একটা ঘটনা ঘটবে,আমরা কয়েক দিন হৈ চৈ করব তারপর সবাই আবার চুপ করে যাবো। সেটা না, এটার একটা স্থায়ী সমাধানের জন্য আমরা প্রস্তাব করেছি যে, একটা জাতীয় মানদণ্ড আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হওয়া দরকার যে, এ ধরনের দুর্ঘটনায় শ্রমিকরা কী ক্ষতিপুরণ পাবে, আহতরা কী ক্ষতিপূরণ পাবে, নিহতরা কী ক্ষতিপুরণ পাবে, মালিকের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা হবে এবং যারা এটার পরিদর্শনের দায়িত্বে তাদের কোনো অবহেলা থাকলে তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা হবে- সব কিছু সেটার মধ্যে থাকা দরকার। যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থ আইএলও কনভেনশন-১২১, তার প্রাসঙ্গিক রেকমেন্ডেশন-১৯৫৮ সালের মারাত্মক দুর্ঘটনা আইন এবং রানা প্লাজার (সাভার) দৃষ্টান্ত অনুযায়ী এই জাতীয় মানদণ্ড প্রণয়ন করার জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, মনে রাখতে হবে যে, মানুষ কাজ করতে যায় জীবন বাঁচানোর জন্য, জীবিকা অর্জনের জন্য। সেখানে কাজ করতে যেয়ে যদি মানুষকে অকালে জীবন দিতে হয় তাহলে তো সেটা কারখানা না, ওটা একটা মৃত্যুকূপ।

তিনি বলেন, পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী হাসেম ফুড কোম্পানির ৯৯৩ কোটি টাকাসহ পুরো সজীব গ্রুপের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। অথচ এ কারখানার শ্রমিকেরা গত ২ মাস ধরে বেতন ও ওভারটাইম ভাতা না পাওয়ায় বিক্ষোভ করেছে এবং পুলিশের মধ্যস্থতায় গত ৫ তারিখ আংশিক পাওনা পরিশোধের কথা থাকলেও তা করা হয়নি বলে পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ অবস্থায় শ্রমিকেরা অকালে নিহত হলেন এবং গতকাল পত্রিকায় এসেছে তাদের স্বজনেরা খালি হাতে ফিরে গেছেন। এমন অমানবিক ঘটনা নিন্দনীয় এবং বিচারযোগ্য অপরাধ।

তিনি বলেন, জানা গেছে- চাপের মুখে গতকাল কিছু শ্রমিক জুন মাসের বেতন পেয়েছেন। অন্যদেরে প্রাপ্যতা অনিশ্চিত। এখনো ওভার টাইম এবং বোনাস দেয়া হয়নি। অবিলম্বে সকল শ্রমিকদের বেতন, ওভারটাইম ও ঈদ বোনাস প্রদানের জন্য আমরা দাবি জানাচ্ছি।

গত মঙ্গলবার রূপগঞ্জের ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শন কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সেখানে গিয়ে কর্মহীন শ্রমিকদের কাজের প্রত্যাশায় দাবি জানাতে দেখেছি। আমরা মনে করি, দীর্ঘদিন বেতনহীন এসব শ্রমিকদের অবিলম্বে প্রাপ্য পরিশোধ করা জরুরি। একই সাথে আমরা চাই, সজীব গ্রুপের প্রত্যেকচি কারখানা যথাযথ পরিদর্শন করে স্বাস্থ্য ও নিরপত্তা ব্যবস্থা কর্মোপযোগী করে যত দ্রুত সম্ভব শ্রমিকদের কাজে ফেরার পরিবেশ নিশ্চিত করা দরকার। যাতে তারা পরিশ্রম করে জীবিকা অর্জন করতে পারে।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, জাতীয় ভবন নীতিমালা অনুযায়ী এই আয়তনের ভবনে কমপক্ষে চার থেকে পাঁচটি সিঁড়ি থাকা জরুরি ছিল। অথচ ছিল মাত্র ২টি। পুড়ে নিহত হওয়া ৪৯টি লাশই পাওয়া গেছে ভবনের চতুর্থ তলায়। সেখানে কর্মরতদের কাছে জানা যায় যে, চতুর্থ তলার গেট বন্ধ ছিল বলে কেউ বের হতে পারেনি। বিষয়টি উপযুক্ত তদন্ত আমরা দাবি করছি।

তিনি বলেন, ১১ বছর ৪ মাস বয়সের হাসনাইন, ১২ বছর বয়সের শান্তা, ১৪ বছর বয়সের মুন্না, ১৫ বছর বয়সের শাহানা ও নাজমুল, ১৬ বছর বয়সের ফয়সাল, ১৭ বছর বয়সের ইউসুফ ও আল আমীনের মতো শিশু-কিশোরসহ ১৬ জন নারী ও ২৩ জন পুরুষ শ্রমিকের অগ্নিদগ্ধ হয়ে এমন মর্মান্তিক ও অকাল মৃত্যুতে এবং ১২ বছরের রুমা ও ১৫ বছরের নদিয়ার মতো অসংখ্য আহতদের শোকার্ত পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনার ভাষা আমাদের নেই। গত পরশু ওই কারখানা পরিদর্শনে গিয়ে শোকার্ত পরিবারের আহজারি এবং বেতন না পাওয়া কর্মহীন শ্রমিকদের দুরবস্থা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি।

তিনি জানান, শিশুশ্রম আন্তর্জাতিক আইনে নিষিদ্ধ। আমরা জেনেছি, সেখানে প্রচুর শিশু শ্রমিক ছিল। বেতন পায় না অনেক দিন। এটা নিয়ে তারা বিক্ষোভ করেছে রাস্তায়। পুলিশ গিয়ে মালিকপক্ষের সাথে আলোচনা করে, সমঝোতা করে বলা হয়েছিল যে, ৫ তারিখে আংশিক পরিশোধ করা হবে। সেটাও ৫ তারিখে পরিশোধ করা হয়নি। ৮ জুলাই বিনা বেতনে চলে গেল আমাদের এই ভাই-বোনেরা।

তিনি বলেন, যারা মারা গেছেন তাদের আত্মীয়স্বজনরা খালি হাতে ফিরে গেছেন। মালিকপক্ষ থেকে নাকি বলা হয়েছে যে, তাদের কার্ড দেন বা পরিচিতির ইয়ে দেন। কোথায় পাবে সেই কার্ড। যারা মারা গেছে তারা তো কার্ডসহ জ্বলে-পুড়ে চলে গেছে। এটা চেয়ে যদি আপনি বকেয়া পরিশোধ না করেন তার মানে আপনি পেমেন্ট করতে চাচ্ছেন না।