‘আমার বউ-মেয়ে সব শেষ’, হাসপাতালে যুবকের আহাজারি

প্রকাশিত: ৩:৩৯ অপরাহ্ণ, |                          

রাজধানীর মগবাজারের ওয়্যারলেস গেট এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে।

রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ওই বিস্ফোরণের পর আহত অনেককেই উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে হাসপাতালে স্বজনরা ছুটে আসেন।

রাতে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে মেঝেতে বসে হাউমাউ করে কাঁদতে দেখা যায় মো. সুজন নামের এক যুবককে। তার গগনবিদারী কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে।

এ সময় ফোনে তিনি বারবার বলছিলেন, ‘আমার বউ-মেয়ে সব শেষ। আমার আর কেউ নাই রে, তোরা কে কোথায় আছোস হাসপাতালে আয়।’

রোববার সন্ধ্যায় ঢাকার মগবাজারে ভবন বিস্ফোরণের ঘটনায় সুজনের স্ত্রী জান্নাত বেগম (২৩) ও নয় মাসের মেয়ে সুবহানা নিহত হয়েছেন।

স্ত্রী-সন্তানকে হারিয়ে দিশেহারা সুজন সাংবাদিকদের বলেন, সন্ধ্যায় মেয়ে সুবহানা আর ১৩ বছরের ভাই রাব্বিকে নিয়ে মগবাজার আড়ংয়ের উল্টো দিকে শর্মা হাউজে খেতে গিয়েছিলেন জান্নাত।

তিনি জানান, বিস্ফোরণের খবর শুনে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে স্ত্রীর লাশ পেয়েছেন। নয় মাসের মেয়ে আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেছে বলে স্বজনদের কাছে জানতে পেরেছেন।

জানা যায়, সুজনের স্ত্রী জান্নাতকে রাত ৯টার দিকে যখন হাসপাতালে আনা হয়, তার পুরো শরীর ধুলাবালি ভরা, ক্ষত আর রক্তও দেখা যাচ্ছিল।

ট্রলিতে শুয়ে অপারেশন থিয়েটার পর্যন্ত যাওয়ার সময় জান্নাত বারবার শুধু একটি কথাই বলেছিলেন: ‘আমাকে বাঁচান, স্বামীকে ডাকেন।’

ঘণ্টা দেড়েক পর জান্নাতের স্বামী সুজন যখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছালেন, ততক্ষণে জান্নাত না ফেরার দেশে।

সুজন জানান, তার কিশোর শ্যালক রাব্বি আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। হাসপাতাল থেকে যখন ট্রলিতে করে জান্নাতের মৃতদেহ বের করা হচ্ছিল, তখন আর সুজনকে আটকে রাখতে পারছিলেন না কেউ।

স্ত্রীর লাশের কাছে গিয়ে বারবার তাকে ডেকে ওঠানোর চেষ্টা করছিলেন। তার কান্না আর আহাজারিতে উপস্থিত অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলেন না।

স্বজনরা জানিয়েছেন, সুজন একটি ওষুধের দোকানে কাজ করেন। শর্মা হাউজ নামের ওই রেস্তোরাঁ তাদের এক আত্মীয়ের। মেয়ে আর ভাইকে নিয়ে সন্ধ্যায় সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলেন জান্নাত।