জনতার কামরান বেঁচে আছেন, তিনি বেঁচে থাকবেন

প্রকাশিত: ৪:২০ অপরাহ্ণ, জুন ১৫, ২০২১ | আপডেট: ৪:২০:অপরাহ্ণ, জুন ১৫, ২০২১

প্রতিটি মানুষ বেঁচে থাকে তার কর্মের মাধ্যমে। তেমনি সিলেটের গণমানুষের প্রিয় নেতা সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বদর উদ্দিন আহমদ কামরান কোটি মানুষের হৃদয়ে বেঁচে আছেন।

বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ছিলেন আওয়ামী লীগের একনিষ্ট এক নেতা। তাঁর হৃদয়জুড়ে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনা। তিনি কখনো পদপদবী কিংবা সুযোগ সুবিধার মোহে অন্ধ ছিলেন না। দীর্ঘদিন মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে থাকায়- সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ মানে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান এধরনের একটা অবস্থান তিনি তৈরী করতে সক্ষম হয়েছিলেন। দলমত নির্বিশেষে তিনি নগরবাসীর সুখে দু:খে পাশে থাকেন। যে কোনো দুর্যোগ কিংবা অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি হলে তিনি সবার আগে ঘটনাস্থলে হাজির হতেন।

কামরানের মাঝে রাজনৈতিক চেতনার সূচনা ঘটে মূলত ১৯৬৫ সালে। সে সময় দেশ-মাতৃকাকে অরক্ষিত মনে হয়েছিল তার। বৈষম্য পীড়া দিত তখন থেকেই। ১৯৬৯ সালে সিলেট সরকারি পাইলট স্কুলের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে ‘পাকিস্তান দেশ ও কৃষ্টি’ নামে একটি বিষয় পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রতিবাদে আন্দোলন গড়ে উঠলে স্কুল ছাত্র কামরানও শামিল ছিলেন সে আন্দোলনে। স্কুলের ছাত্র থাকাকালীন সময়েই গায়ে মুজিব কোট চড়িয়েছিলেন কামরান।

জিন্দাবাজার দুর্গাকুমার পাঠশালায় তার পড়াশোনার প্রথম পাঠ। এরপর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, এমসি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের পাট শেষ করেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময়ই ৬৪২ ভোট পেয়ে তৎকালিন সিলেট পৌরসভার ৩নং তোপখানা ওয়ার্ড থেকে দেশের সর্বকনিষ্ঠ পৌর কমিশনার নির্বাচিত হন তিনি।

বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের জীবনে সাফল্য ধরা দিয়েছে বারেবার। ১৯৭২ সালে কামরান প্রথম যখন পৌরসভার কমিশনার হন তখন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন বাবরুল হোসেন বাবুল। এর পরের বার পৌর চেয়ারম্যান হন অ্যাডভোকেট আফম কামাল। পরবর্তীতে পৌরসভা ও সিটি নির্বাচনে এ দুই চেয়ারম্যানই পরাজিত হন কামরানের কাছে। ১৯৭২ সাল থেকেই কামরান সিলেট পৌরসভার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে পড়েন।

বদরউদ্দিন আহমদ মেয়রের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি টানা তিনবার সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। সর্বশেষ সম্মেলনে মহানগরের সভাপতি থেকে সরে গেলেও স্থান পান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৮১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে।

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদের হাত ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া কামরান ছিলেন সিলেট শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও। ছাত্র অবস্থাতেই রাজনীতির মাঠে পা রাখেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। ১৯৬৮-৬৯ এর উত্তাল সময়ে বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের মিছিল যাওয়ার শুরু।

এক এগারো পরবর্তী জরুরি অবস্থা চলাকালীন সময়টি বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের জীবনখাতায় উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। এ সময়ে দুই দফায় ১৮ মাস কারাবন্দি ছিলেন কামরান। কারাগারের বদ্ধ জীবনেই কঠিনতম এবং মধুরতম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন। ক্ষমতাসীনরা তাকে কারাগারে আটকে রাখলেও তার প্রতি মানুষের ভালোবাসায় চিড় ধরাতে পারেনি। মানুষের ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাস ও আল্লাহর প্রতি আস্থা রেখেই ২০০৮ সালের সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেন কামরান। নির্বাচনের দিন তিনি কুমিল্লা কারাগারে বন্দি। এ নির্বাচনে ৮০ ভাগ ভোটই কামরানের বাক্সে জমা পড়েছিল। সিটি করপোরেশনের সকল ভোটকেন্দ্রে বিজয়ী হয়ে তিনি নজির সৃষ্টি করেন। এমনকি নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী সকল প্রার্থীর জামানতও বাতিল হয়েছিল। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন কীর্তি আর কেউই গড়তে পারেননি।
২০২০ সালে অসুস্থ হওয়ার আগে করোনা পরিস্থিতিতে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান কামরান। মৃত্যুভয়কে পদদলে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ছুটে যান অসহায় মানুষের সহায়তায়।
তিন মেয়র কামরান থেকে হয়ে উঠেন জনতার কামরান।
আজ ১৫ জুন তাঁর প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী। তিনি এ ধরায় বেঁচে না থাকলেও জনতার কামরান বেঁচে আছেন মানুষের হৃদয়ে ।