১৩ বছর পর মিসর গেলেন ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ৫:৫৭ অপরাহ্ণ, |                          

গাজায় সহায়তা নিয়ে আলোচনার জন্য মিসর গিয়েছেন ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাবি আশকেনাজি। রোববার তিনি মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হবে। এ খবর জানিয়েছে ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম হারেজর্ৎ।

খবরে বলা হয়, ২০০৮ সালের পর এ ধরনের বৈঠক এটিই প্রথম। বৈঠকে মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামিহ শুকরির সঙ্গে গাজায় যুদ্ধবিরতিকালে কীভাবে সহায়তা দেয়া হবে, এবং গাজা উপত্যকা কিভাবে স্থিতিশীলতা কীভাবে নিশ্চিত করা যায় এ নিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করা হবে।

এদিকে রোববার ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেছেন মিসরের গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান।

মিসরের সাবেক স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের পতনের পর ক্ষমতায় আসা মুসলিম ব্রাদারহুড নেতা ড. মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ইসরাইলেরও পরোক্ষ সহযোগিতা ছিল বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

জেরুজালেম পোস্টের খবরে বলা হয়, শুক্রবার মিসরের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা গাজা উপত্যকায় পৌঁছান। তারা হামাসের সঙ্গে ইসরাইলের যুদ্ধবিরতি নিয়ে সার্বিক বিষয়টি দেখভাল করছেন। ওই সফরটি ছিল তৃতীয়বারের সফর।

প্রসঙ্গত, দশক দশক ধরে মিসরে চলেছে সেনাবাহিনীর স্বৈরশাসন। ২০১১ সালে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতন ঘটে তিন দশকের স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের। এরপর গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিজয়ী হন মুসলিম ব্রাদারহুড নেতা মোহাম্মদ মুরসি।

মিসরের স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের পতন ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসেন মুরসি। টানা ১৮ দিনের গণআন্দোলনে মোবারকের ৩০ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। মোহাম্মদ মুরসি মুসলিমপন্থী দল মুসলিম ব্রাদারহুডের ওপরের সারির নেতা ছিলেন। তিনি ২০১২ সালে জনগণের ভোটের মধ্য দিয়ে মিসরের প্রথম গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পান।

মিসরের ইতিহাসে প্রথম রাষ্ট্রপতি যিনি পবিত্র কোরআনের হাফেজ ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন প্রকৌশলী ও ম্যাটারিয়ালস সাইন্সের ওপর ডক্টরেট ডিগ্রিধারী। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত আমেরিকার বিখ্যাত ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। এরও আগে তিনি মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘NASA’-য় বিজ্ঞানী হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। ১৯৮৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের চাকরি ছেড়ে মিসরে চলে আসেন। পরে তিনি স্থানীয় জাগাজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা শুরু করেন।

তবে তিনি এক বছরও ক্ষমতায় থাকতে পারেননি। ২০১৩ সালে মিসরের সেনাবাহিনী মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে। পরে প্রেসিডেন্টের মসনদে বসেন মুরসির হাতে সেনাপ্রধান হওয়া আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি। এরপর থেকে মিসরের ক্ষমতায় রয়েছেন এ স্বৈরশাসক। পরে আদালতের এজলাসে মৃত্যুবরণ করেন মুরসি।

সিসি ক্ষমতায় আরোহনের পর তুরস্কের সঙ্গে মিসরের সম্পর্ক চূড়ান্তভাবে খারাপ হয়। এরদোগান প্রকাশ্যে সিসিকে প্রেসিডেন্ট মানতে অস্বীকার করে বলেছিলেন, ‘আমরা জানি, মুহাম্মদ মুরসিই মিসরের বৈধ প্রেসিডেন্ট।’

এরদোগান তখন বলেছিলেন, আমাদের কাছে মোহাম্মদ মুরসি শহীদ। ইতিহাস সেই (সিসি) একনায়ককে ক্ষমা করবে না যে কিনা জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসিকে জেল দিয়েছে, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নির্যাতন করেছে এবং তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি তার হাজার হাজার বিপ্লবী সমর্থককে নিয়ে গত পাঁচ বছর ধরে কারাগারে ছিলেন কিন্তু পাশ্চাত্যের কেউ এর প্রতিবাদ করেনি।

এরদোগান বলেন, আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের শহীদ ভাইদের জন্য দোয়া করছি, আল্লাহ যেন শহীদদের ওপর রহম করেন। আদালতের এজলাসেই তার মৃত্যু হয়েছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি আল্লাহর কাছেই রহমত কামনা করি।

এরদোগানের এমন বক্তব্যের পর সিসি সরকারের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক চরম অবনতি হয়।

এক পর্যায়ে লিবিয়া ইস্যুতে মিসরের সঙ্গে তুরস্কের যুদ্ধ হওয়ারও শংকা দেখা দিয়েছিল। লিবিয়ার হাফতার বাহিনীকে সমর্থন দিয়েছিল মিসরের সিসির সরকার। আর হাফতার বাহিনীর বিরোধী জাতিসংঘ মনোনীত সরকারকে সমর্থন দেয় এরদোগানের তুরস্ক। পরে তুর্কি ড্রোনে নাস্তানাবুদ হয়ে হাফতার বাহিনী রাজধানী ত্রিপলী দখল করা থেকে পিছু হঠে। এছাড়াও ভূমধ্যসাগরসহ বিভিন্ন ইস্যুতে দুই মেরুতে অবস্থান করছে মিসর ও তুরস্ক।