চাঁপাইনবাবগঞ্জ ভারতীয় করোনা ভেরিয়েন্টের হটস্পট হয়ে উঠেছে

প্রকাশিত: ৪:১৪ অপরাহ্ণ, |                          

হঠাৎ করেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ভারতীয় করোনা ভেরিয়েন্টের হটস্পট হয়ে উঠেছে। এই জেলার আক্রান্তদের অনেকেরই দেহে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। দেশের সর্বপশ্চিমের এই ছোট জেলার তিনদিক ঘিরে ভারতীয় সীমান্ত। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য পরিসংখ্যান বলছে, গত কয়েকদিনে এই জেলায় করোনাক্রান্তের গড় হার ৬০ ভাগ থেকে ৭৮ ভাগের মধ্যে ওঠানামা করছে। দেশের অন্য জেলাগুলোর তুলনায় এই হার এখন সর্বোচ্চ। ঈদের দুদিন পর থেকেই সংক্রমণের হার এক লাফে বেড়ে গেছে। স্থানীয়রা বলছেন, চলাচল নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনিক অবহেলা ও সীমান্ত পথে অবৈধভাবে চলাচল বন্ধ না হওয়ায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট এই জেলায় ঢুকেছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার (গতকাল) পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মোট ১৩৮ জন কোভিড রোগীর মধ্যে ৮৮ জনই চাঁপাইনবাবগঞ্জের। অন্যদিকে এই হাসপাতালের আইসিইউতে থাকা ১৪ জনের মধ্যে নয় জনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এদের মধ্যে আটজনের দেহে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি প্রাথমিকভাবে শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া এই জেলার ১৮৮ জন হাসপাতালে ও অন্যান্য স্থানে কোয়ারেন্টিনে আছেন। তিনি বলেন, এটা খুবই শঙ্কার বিষয় যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়লে পুরো রাজশাহী অঞ্চলে করোনা প্রতিরোধ করা কঠিন হবে।

তিনি বলেন, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট থাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আট করোনা রোগীর নমুনা বিশ্লেষণ হচ্ছে আইসিডিডিআরবিতে। শিগগিরই ফল পাওয়া যাবে। তখন বোঝা যাবে ভারতীয় এই ভ্যারিয়েন্টটা কতটা বিধ্বংসী। এই আটজনই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের শারীরিক পরিস্থিতির ওপর বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। শুক্রবার পর্যন্ত তাদের শারীরিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল ছিল।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য মতে, বৃহস্পতিবার রাজশাহী মেডিকেল ল্যাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১১৮টি নমুনা পরীক্ষার পর ৫৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এছাড়া ঢাকায় পাঠানো ১৭টি নমুনার মধ্যে এই জেলার আরও আটজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মোট ২১৬ জন করোনা রোগী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা সদরের আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

অন্যদিকে করোনা ছড়িয়ে পড়ায় বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসন জরুরি সভা করেছেন। করোনার বিস্তার ঠেকাতে দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় এদিন। এর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনে অধিক সংখ্যায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা ও নমুনা পরীক্ষার হার বাড়ানো। এজন্য একাধিক জরুরি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় করোনার প্রকোপ ছড়িয়েছে সেসব এলাকার অধিকাংশ মানুষকে পরীক্ষার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের বেশ কয়েকজনের নমুনায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ায় আমরা বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। তারা চিকিৎসাধীন আছেন রামেক হাসপাতালে। কিন্তু তারা কেউই মুখ খুলছে না কীভাবে তাদের শরীরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট এলো। স্বীকারও করছে না যে তারা সম্প্রতি কোন উপায়ে ভারত থেকে এসেছেন। আমরা ধারণা করছি এসব লোক অবৈধভাবে সীমান্ত পথে ভারতে চলাচল করে থাকতে পারেন। আক্রান্ত এসব ব্যক্তির সবার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তবর্তী শিবগঞ্জ এলাকায়। বিষয়টি আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরকেই জানিয়েছি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী বলেন, ঈদ করতে ঢাকা থেকে এসে কিছু মানুষ যথেচ্ছ চলাচল করেছে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে। এদের অধিকাংশই শিবগঞ্জের জালমাছমারী, নয়ালাভাঙ্গাসহ আশপাশের এলাকার। কোনো কোনো পরিবারের সবাই আক্রান্ত হয়েছেন। এটাই স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। তিনি স্বীকার করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জে এখন দেশের মধ্যে করোনা সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও এই বিষয়ে উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে কিছু মানুষের নমুনায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়ায়। এখন আমরা খুঁজছি কীভাবে তারা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত হলেন। শিবগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাকিল আল রাব্বী বলেন, এই উপজেলার তিন দিক ঘিরে ভারতীয় সীমান্ত। অনেক এলাকার সীমান্ত উন্মুক্ত। লোকজন হয়তো কোনো কারণে ভারতে চলাচল করে থাকতে পারেন। আমরা তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনে প্রশাসনিক কিছু পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়েছে। জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল বলেন, আর কয়েকদিন পরই জেলার একমাত্র অর্থকরী পণ্য আম উঠবে। সারা দেশ থেকে লোকজন আসবে। পরিস্থিতি এখন বেশ খারাপ বলা যায়। সবকিছু কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা নিয়ে ভাবা হচ্ছে।